ফুলটির নাম
নন্দিনী,ইংরেজি নাম লিসিয়ানথাস। বৈজ্ঞানিক নাম এস্টোমা গ্রান্ডিফ্লোরাম। আমেরিকায় ‘আমেরিকান গোলাপ’ নামে পরিচিত। জেনেটিনসিয়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত
বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ এটি। মূল কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত। পাতার রং নীলাভ সবুজ।কাট
ফ্লাওয়ার হিসেবে ফুলের জগতে এর অবস্থান সবার ওপরে। প্রতিটি গাছে একক ও দ্বৈত রঙে
৮০টির অধিক ফুল দেখা যায়। ফুল তোলার পর প্রায় ২০ দিন এবং গাছে ফোটা অবস্থায় ৩৫
থেকে ৪০ দিন সতেজ থাকে। চারা লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যে ফুল তোলা যায়।শেরেবাংলা কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এ ফয়েজ এম
জামালউদ্দিন। দীর্ঘ ১০ বছর যাবত তিনি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নন্দিনী উৎপাদনের জন্য
গবেষণা চালিয়েছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাপান থেকে সংগ্রহকৃত নন্দিনী গাছে বর্তমানে
প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০টি ফুল ফুটছে। তবে একটি গাছে সর্বোচচ ৬০টি ফুল উৎপাদন করা
সম্ভব।
নতুন
প্রজাতির এ ফুল সম্পর্কে ড. জামাল বলেন, ফুলটি যে শুধু সৌন্দর্যের দিক থেকে অনন্য
তা-ই নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের আবহাওয়া এ ফুলের
জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তা ছাড়া আমাদের দেশের বেশিরভাগ ফুল শীতকালে ফোটে। কিন্তু
গ্রীষ্মকালসহ সারাবছরই এ ফুল উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০টি
ফুল ফুটছে। তবে একটি গাছে সর্বোচচ ৬০টি ফুল উৎপাদন করা সম্ভব। ড. জামাল আরও বলেন,
ফুলপ্রেমীরা তাদের বাসায় ফুলদানিতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত শুধু পানিতে ভিজিয়ে
সংরক্ষণ করতে পারবেন। সে দিক থেকে আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান ফুলের চাহিদার
প্রেক্ষিতে এটি খুবই উপযোগী। আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং মাটির জন্যও মানানসই। এ
ফুলের বংশ বিস্তারের উপকরণ বালব (কন্দ)।
বাংলাদেশের
আবহাওয়া উপযোগী নন্দিনী ৬.০-৬.৭ পিএইচ, দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভাল জন্মে। এর
বীজের আকার খুবই ছোট। গ্রীন হাউসে এর চারা উৎপাদন করতে
হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ উন্নত মানের মিহি মাটি বীজ অঙ্কুরোদগমের জন্য প্রয়োজন।
অঙ্কুরোদগমের জন্য সাধারণত ১০-১২ দিন লাগে। চারায় চার জোড়া পাতা হলে চারা মাঠে
রোপণ করা যায়। জমি ভালভাবে আড়াআড়ি চাষ দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে জৈবিক ও রাসায়নিক সার
প্রয়োগ করে জমি তৈরি করে নিতে হয়। চাষের সময় চুন পাউডার জমিতে ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল
পাওয়া যায়। প্রতি বর্গমিটারে ৪-৫ কেজি পচাঁ গোবর, ১৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে
ভালভাবে জমিতে মেশাতে হবে। বেডের প্রস্থ ১ মিটারে সীমাবদ্ধ রাখলে আন্তঃপরিচর্যা
নিতে সুবিধা হয়। মাটিতে চারা থেকে চারা এবং সারি থেকে সারি ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব
রাখতে হবে। প্রতিদিন চারা হাল্কা সেচের প্রয়োজন। চারা একটু বড় হলে গোড়ায় মাটি তুলে
দিলে ফুলের আকার বড় হয়। চারা লাগানোর ২ মাস থেকেই ফুল আসতে শুরু হয়। প্রতি ডালে
গড়ে ২০-২৫টি ফুল ফোটে বিধায় একেকটি গাছ থেকে কমপক্ষে ৮০-৯০টি ফুল পাওয়া যায়।
সাধারণত জুন-জুলাই মাসে ফুল ফুটলেও সারা বছর ফুল উৎপাদন সম্ভব। জুন-জুলাই মাসে
ফুলের বীজ বপন করতে হয়। রোগ ও পোকামাকড়ের সমস্যা নেই বললেই চলে। স্বাভাবিক
তাপমাত্রায় নন্দিনী ফুলদানিতে ১০-১৫ দিন ভাল থাকে। তবে ফুলদানিতে সামান্য সুক্রোজ
মিশিয়ে এ দৈর্ঘ্য ২০-২৫ দিন রাখা যায়। নন্দিনী বীজ উৎপাদন খুবই সহজ, প্রচলিত
পদ্ধতিতে মাঠে বীজ উৎপাদন সম্ভব। নন্দিনী ফুলের লম্বা বোঁটা ও বর্ণ বৈচিত্রতার
কারণে এবং চাহিদা পৃথিবীজুড়ে। এ ফুল উৎপাদনে ফুল উৎপাদনকারী ও গবেষণা
প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের দেশের ফুলের বাজারও
সমৃদ্ধ হবে।
ড.জামাল
জানান, ইতোমধ্যে দেশের একটি খ্যাতনামা কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি এ ফুলের চারা
বাজারজাত করতে যোগাযোগ করেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে খুব শিগগিরই এ ফুলের চারা কৃষকের
জন্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দাম অবশ্যই ১০ টাকার বেশি হবে না।
(সংগৃহীত)
উত্তর সমূহ